শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরের স্বাস্থ্য ও রুচিসম্মত খাবারের নিশ্চয়তায় উদ্বোধন হলো মেজবান রেস্তোরাঁ ইংল্যান্ডের বার্ণলী সিটির সাবেক কাউন্সিলর কমিউনিটি নেতা মুজাক্কির আলীর স্বদেশ আগমন শান্তিগঞ্জে তারুণ্যের উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ  জগন্নাথপুরে এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আটক ২  শান্তিগঞ্জে বরেণ্য শিক্ষাবিদ আব্দুর রউফ এর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষাবিদ মো. আব্দুর রউফ’র স্মরণ সভা আজ শান্তিগঞ্জে বিয়াম ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের শুভ উদ্বোধন সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-ঢাকা মহাসড়কে গাছ ফেলে দুর্ধর্ষ ডাকাতি  জগন্নাথপুরে পুলিশী অভিযানে গ্রেফতার ৫ জগন্নাথপুরে সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর উদ্বোধন

শেষ ইচ্ছেও পূরণ হচ্ছে না খোকার!

শেষ ইচ্ছেও পূরণ হচ্ছে না খোকার!

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: শেষ ইচ্ছেটিও পূরণ হচ্ছে না বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার। প্রিয় স্বদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার প্রচণ্ড আঁকুতি নিয়েই দেশ থেকে বহুদূরে, সাতসমুদ্র তেরনদী পেরিয়ে হাসপাতালের বিছানায় এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি। পাসপোর্ট না থাকায় এই মুহূর্তে তিনি অনেকটা দেশহীন। এ অবস্থায় যদি তিনি চলে যান না ফেরার দেশে তাহলে তার মৃতদেহটিও দেশে পাঠানোর বিষয়টি অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যরা প্রচণ্ড হতাশ। সাবেক এই মন্ত্রীর সুস্থ হয়ে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় চিকিৎসকরা এরই মধ্যে তার ক্যানসার চিকিৎসায় ক্ষান্ত দিয়েছেন। বর্তমানে নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটেরিং ক্যানসার সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।

নিউ ইয়র্কে খোকা পরিবারের ঘনিষ্ঠজন মাহমুদ হোসাইন বাদশা  জানান, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের মে মাসে একজন ভিজিটর হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র।
নিউ ইয়র্কের স্লোন কেটেরিং হসপিটালে চিকিৎসা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাকে চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়েছে। সে কারণে লম্বা সময়ের জন্য নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু ভিজিটর ভিসার নিয়মানুযায়ী প্রতি ছয় মাসের মধ্যে দু’চার দিনের জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেতে হতো। এভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষদিকে তার নিজের এবং সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় তারা নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাদেরকে পাসপোর্ট না দেয়ায় এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে খোকা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। তার সেই আবেদন এখনো অনিষ্পন্ন। এরমধ্যে দফায় দফায় কনস্যুলেটে খোঁজ নিয়েও পাসপোর্টের কোনো হদিস মেলেনি। সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে ইসমত হোসেন সশরীরে কনস্যুলেটে গিয়ে পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা প্রথম সচিব শামীম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনি যথারীতিই পাসপোর্টের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি। অগত্যা হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।

বাদশা জানান, বিরতিহীন চিকিৎসার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক মাস ধরে সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফেরার জন্য অনেকটা পাগলের মতো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বলতেন, ঢাকায় যাওয়ার পর জেলে যেতে হলে যাবো, চিকিৎসার জন্য আর আসতে না দিলেও সমস্যা নাই। দেশে গিয়েই মরবো। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া দেশে যাবো কি করে? মাহমুদ হোসাইন বাদশা বলেন, কাকতালীয়ভাবে খোকার রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের ওপর যেদিন আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার তারিখ ছিল সেদিন ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। গাড়িতে চড়ে ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার সময় পুরোটা পথ নীরবে চোখের পানি ঝরিয়েছেন। এক পর্যায়ে পাশে বসে থাকা স্ত্রীকে বললেন, আজ বাংলাদেশের বিজয় দিবস। যুদ্ধ করে এইদিনে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ সেই বিজয় দিবসেই যাচ্ছি অন্য দেশে আশ্রয় চাইতে!
তিনি বলেন, খোকা কেবল একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি মেয়র হওয়ার পর রাজধানী ঢাকার অনেকগুলো সড়কের নাম মুক্তিযুদ্ধের সকল সেক্টর কমান্ডার ও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করেছিলেন। তিনিই প্রথম বিজয় দিবসে নগরভবনে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলার আয়োজন করেছিলেন। অথচ তার মতো একজন নিখাঁদ দেশপ্রেমিক মানুষের জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় দেশে ফেরা অনিশ্চিত। এরচেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে? মৃত্যুর পর কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় তার মরদেহ দেশে নেয়া সম্ভব হলেও পাসপোর্ট না থাকায় স্ত্রী ইসমত হোসেন সঙ্গে যেতে পারবেন না। সেটা হবে আরো মর্মান্তিক বিষয়।

সাদেক হোসেন খোকার সর্বশেষ অবস্থা এবং পরিবারের চিন্তা-ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে তার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ফুসফুসে মারাত্মকভাবে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ায় তার জীবন এখন বিপন্নপ্রায়। অথচ তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কিডনি ক্যানসারের। হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তবে এখনো পর্যন্ত অক্সিজেন-সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে আছেন। চেতনাও অনেকটাই ঠিক আছে। সবাইকে চিনতে পারছেন। কিন্তু কথা বলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সারাক্ষণ দেশের কথা জিজ্ঞেস করেন। কেউ দেখতে এলেই জানতে চান, দেশের খবর কি। আর সারাক্ষণই চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানতে চইলে তিনি বলেন, আমরা খুবই বিভ্রান্তি ও হতাশার মধ্যে আছি। আব্বু-আম্মু কারো পাসপোর্ট নেই। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন সাদেক হোসেন খোকা। তারপর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ থাকছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ইসমত হোসেন। চিকিৎসার জন্য আসার চেষ্টায় ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বাধায় প্রথম দফা তিনি ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে তার বিদেশ গমনে বাধা দূর হলে প্রায় তিন সপ্তাহ পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ওই তিন সপ্তাহ বিলম্বের কারণেও ক্যানসার তার শরীরে অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান বড় মেয়ে সারিকা হোসেন। তিনি বলেন, তারপরও নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা শুরুর পর গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তার ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় তিনি এখন সংকটাপন্ন। পিতার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন সারিকা হোসেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com